হাওড়ার ধুলাগড়ি এলাকাতে রয়েছে অম্বুজা সিমেন্টের কারখানা। আর এই কারখানার বজ্য পদার্থ পরিশোধন না করেই কারখানার বজ্য মিশছে এলাকার পরিবেশে। যার জেরে নানান ধরণের চর্ম রোগ থেকে মরণ ব্যাধিও বাসা বাঁধছে এলাকার বাসিন্দাদের শরীরে। হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের তিনটি গ্রাম মহিষগোট, চতুর্ভূজকাটি আর ভগবতীপুরের বাসিন্দারা এই দূষণ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন। আন্দোলন, বিক্ষোভের পরেও সেভাবে কাজ হয় নি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। পরিস্থিতি এমনই ভয়ানক যে দিন দশেক আগে কারখানার পাশেই এক পরিবারের আট মাসের কন্যা সন্তানের শ্বাসকষ্টে মৃত্যুও হয় বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনিক ও পরিবেশ আদালতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিভিন্ন সম্প্রতি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পরীক্ষায় জানা গিয়েছে গ্রামের বাতাসে দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। এমনকি দূষণের মাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের দিল্লি শহরের দূষণের মাত্রাকেও। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে এরূপ মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ঘটানোর জন্য অম্বুজা সিমেন্ট কারখানার জরিমানা হওয়া উচিত ৬ কোটি ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ১২৫ টাকা। তা সত্ত্বেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। রমরমিয়ে চলছে কারখানার কাজ, বাড়ছে দূষণ। গ্রামের ঘরে ঘরে বাড়ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। জমিতে ফলছে না ফসল। ভুগছে পশুপাখি। এর এই সমস্যার কথা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে বারংবার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।ভারতীয় সংবিধানের ২১নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকের বেঁচে থাকার অধিকার সর্বজনস্বীকৃত। আর সেই অধিকারে বাঁধ সাধলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আর এই মৌলিক অধিকার হরণের দায়ে অভিযুক্ত অম্বুজা সিমেন্ট কারখানা। আজকে পরিবেশ আদালত থেকে স্থানীয় এলাকাতে গণ শুনানি ডাকা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ সেই শুনানিতে তাঁদেরকে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। অম্বুজা কোম্পানি বাইরে থেকে বাসে করে লোক এনে এলাকার বাসিন্দা সাজিয়ে পরিবেশ আদালতের অধিকারিকদের সামনে পেশ করছে। যারা যারা আজকে এই শুনানিতে বক্তব্য রেখেছে তাঁরা এখানকার বাসিন্দাই নয়। তাঁরা শুনানিতে ঢুকতে গেলে তাঁদেরকে ভেতরে বসার জায়গা নেই বলে ঢুকতে দেয় নি। এই ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা শুনানিতে জানাতে পারলেন না।স্থানীয় বাসিন্দা ছবি আড়ি অভিযোগ করেন শরীরে চাকা চাকা দাগ ও চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে এই কারখানা থেকে নির্গত ধোঁওয়াতে। কিছুতেই সারছে না চর্ম রোগ। নিঃস্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। এছাড়াও তাঁর পরিবারের আট মাসের কন্যা সন্তান হাঁপানি রোগে মারা গেছে দশ দিন আগে বলেই অভিযোগ করেন তিনি। আর এই দূষণের জন্য কারখানার দূষণকেই দায়ী করেন তিনি। তাঁর দাবি অবিলম্বে এই কারখানা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।যদিও কাঁদুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অলোক কুমার জেটি জানান আজকে পরিবেশ আদালতের অধিকারিকদের সামনে কোম্পানির ও গ্রামবাসীদের তরফ থেকে বক্তব্য রাখা হয়েছে। সেটা শোনার পরে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও জানান এই এলাকা শিল্প তালুক হিসাবে গড়ে উঠেছে। এখানে শুধু একটা নয় অনেকগুলো কারখানা রয়েছে। এলাকার খালগুলোকে সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। অম্বুজা কোম্পানির কর্তৃপক্ষ আগাগোড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দাদের সঙ্গে সু সম্পর্ক রেখে চলে।তবে উৎপাদন আরও বেড়ে গেলে এলাকার পরিবেশ আরও বেশি দূষিত হওয়ার যে সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে তাঁকে রক্ষা করে কিভাবে পরিবেশ দফতর কাজ করবে তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে অসহায় দূষণের শিকার গ্রামবাসীরা।
Howrah Dhulagarh: অম্বুজা সিমেন্টের কারখানার দূষণে নাজেহাল একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা ,অভিযোগ গণ শুনানির নামে চলল প্রহশন
রিপোর্ট : শুভাশীষ দত্ত , এই যুগ, হাওড়া