আলিপুরদুয়ার দুই নম্বর ব্লকের শামুকতলা থানার অন্তর্গত শিবকাটা এলাকায় ১৯২৮ সালে কলকাতার বাঙ্গালি শিল্পপতি পার্শ্বনাথ ঘটকের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল শ্রীনাথ পুর চা বাগান। যে সময়ে এই চা বাগান গড়ে তোলা হয়েছিল তখন এলাকাটি ছিল অত্যন্ত দুর্গম। এলাকায় ছিলনা কোনো রাস্তাঘাট। জঙ্গলাকীর্ণ এই এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসত বাঘ, ভালুক ও হাতির পাল। দেশ স্বাধীন হবার পর পার্শ্বনাথ ঘটকের হাত ধরে শ্রীনাথ পুর চা বাগান কলেবরে অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছিল। চা বাগানের কাজে মাঝে মাঝেই পার্শ্বনাথ ঘটক ও তার পরিবারের লোকজন কে চা বাগানে এসে থাকতে হত। কিন্তু চা বাগানে তাদের থাকার মত কোনো ঘর ছিলনা। থাকার সমস্যা দূর করার উদ্দ্যেশ্যে পার্শ্বনাথ ঘটক সিদ্ধান্ত নেন চা বাগানে একটি কাঠের বাংলো বাড়ী নির্মানের। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে পার্শ্বনাথ ঘটক পড়লেন মহা সমস্যায়। তার পরিকল্পনা মাফিক কাঠের বাংলো নির্মানের জন্য উপযুক্ত কোনো মিস্ত্রি এলাকায় পাওয়া যাচ্ছিলনা। পার্শ্বনাথ বাবু তার শখের বাংলো নির্মান এর জন্য চীন থেকে নিয়ে আসেন একদল দক্ষ মিস্ত্রি। এই মিস্ত্রিরা টানা ছয় মাস কাজ করে এই সুদৃশ্য বাংলোটি নির্মাণ করে। শাল গাছের খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই বাংলোটির তিনদিকে রয়েছে ঘেরা বারান্দা। প্রতিটি কক্ষে আছে সুদৃশ্য কাঠের পালঙ্ক ও আসবাব। অত্যাধুনিক শৌচাগার, পাথরের বাথ টাব যুক্ত স্নানাগার বাংলোটিতে রয়েছে। জানা গেছে পার্শ্বনাথ ঘটক শুধু সৌন্দর্য পিপাসুই ছিলেননা, ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয় ও শিক্ষানুরাগী। সঙ্গীত শোনার জন্য তিনি এই কাঠের বাংলোতে বিদেশ থেকে আমদানী করেছিলেন হাতে চালানো গ্রামোফোন। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের উদ্দ্যেশ্যে গড়ে তোলেন শ্রীনাথ পুর পার্শ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়। পার্শ্বনাথ ঘটকের মৃত্যু হয়েছে, চা বাগানের মালিকানা বদল হয়েছে কিন্তু রয়ে গেছে তার হাতে গড়া চা বাগান,সুদৃশ্য কাঠের বাংলো, বিদ্যালয়। আজব দূর দূরান্তের মানুষ ভীড় করেন শ্রীনাথ পুর চা বাগানে এই সুদৃশ্য কাঠের বাংলোটি দর্শন করতে। তাই এলাকাবাসীর দাবী সংস্কার করে পর্যটক আবাস হিসাবে খুলে দেওয়া হোক এই মনোরম বাংলোটি।
Chinese Tea Garden Srinarthpur: চীনা মিস্ত্রিদের হাতে তৈরী শ্রীনাথ পুর চা বাগানের নান্দনিক কাঠের বাংলো
সুকুমার রঞ্জন সরকার, আলিপুরদুয়ার