শুক্রবার , অক্টোবর 10 2025
Breaking News

Halkhata: হালখাতা

রিপোর্ট : সৌভিক চক্রবর্তী , এই যুগ, নিউজ ডেস্ক

দিন পেরোলেই একটা নতুন বছরের শুভারম্ব। বাঙালীর নববর্ষ (Halkhata)। এই নববর্ষ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিভিন্নভাবে উদযাপন করে। (Halkhata) নতুন জামাকাপড়, খাওয়া-দাওয়া, একটু ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। এই নতুন বছরের আরেকটি আকর্ষণ থাকে সেটি হলো সুন্দর লাল টুকটুকে মলাটে মোড়া হালখাতা।(Halkhata) খাতার ভিতরে প্রথমেই থাকে সিদ্ধিদাতা গণেশ ও ধনদেবী লক্ষীর ছবি। Halkhata: হালখাতা

ব্যবসায়ীরা বছরের প্রথম দিনে (Halkhata) দেনা-পাওনার হিসাব মিলিয়ে গণেশ – লক্ষীর পূজা দিয়ে নতুন খাতা ‘হালখাতা’ খোলেন;ব্যবসায় শ্রীবৃদ্ধির আশায়।  এই হালখাতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রেতা একটি আমন্ত্রণ পাঠিয়ে ক্রেতাদের অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং দেনা-পাওনার সমস্ত হিসাব চুকিয়ে দিয়ে নতুন খাতায় হিসাব রাখার কথা মনে করিয়ে দেন। ক্রেতারাও তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে থাকে। হিসাবের খাতা হাল নাগাদ করা থেকে “হালখাতা”-র উদ্ভব। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছোট বড় মাঝারি যেকোনো দোকানেই এটি পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু,একটু ইতিহাসের দিকে চাইলে দেখা যায় যে হাল অর্থাৎ লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা হতো। সেই চাষ সম্পর্কিত যাবতীয় হিসাব যে খাতায় লিপিবদ্ধ করা হতো তাকেই সাধারণভাবে হালখাতা বলা হতো।
এবার প্রশ্ন আসতেই পারে এই কৃষিকাজ সম্পর্কিত হিসাব কীভাবে বাঙালীর নববর্ষের উৎসবের সাথে এমন ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেলো? সংস্কৃত ভাষায় ‘হাল’ শব্দের অর্থ লাঙ্গল হলেও ফরাসী ভাষায় তার অর্থ নতুন। এই হাল খাতাকে লালখাতা বা খেরোখাতাও বলা হয়ে থাকে। অনেকের মতে মুঘল যুগে সম্রাট আকবর নির্দেশ দেন যে বছরের প্রথম দিনেই কৃষি রাজস্ব আদায় করার। হিন্দু সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা এবং ইসলামি চন্দ্রমাস হিজরী সালের সমন্বয়েই মুঘল রাজ জ্যোতির্বিদ এই দিনটিকে নির্দিষ্ট করেছিলেন – তারপর থেকেই এইদিন হালখাতা উৎসব অথবা তৎকালীন সমাজে পুণ্যহ বলে পরিচিত ছিল। অনেকে আবার এও বলে থাকেন যে, বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ – এর সময় থেকেই হালখাতার সূচনা হয়। রাজস্ব আদায়ের জন্যই এই হালখাতার প্রচলন করেন তিনি। এটিকে লাল খাতা কিংবা খেরো খাতাও বলা হয়। নতুন বছরে খাতার প্রথম পাতায় লাল সিঁদুরের স্বস্তিক চিহ্ন একেই সূচনা করা হয় নতুন খাতা কিংবা হালখাতার।
বাংলার প্রবাহমান সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখের সাথে প্রকটভাবে সম্পর্কিত হালখাতা ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে একটি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন করে তোলে। কিন্তু যুগের সাথে সাথেই পাল্টে যাচ্ছে সংস্কৃতির প্রবাহমান ধারা। বর্তমানে হালখাতার ব্যবসায়ীদের হাল বেহাল হয়ে পড়েছে। তাদের মত, আগের মতো আর চাহিদা নেই। যতোই বছর পেরোচ্ছে ততই চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। লাল টুকটুকে মলাটে ধুলো জমছে।ফলত সংসারের ভরণপোষণ হচ্ছে কোনরকমে। আমরা কি পারিনা এই হালখাতার হাল ফিরিয়ে আনতে ?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।