ঠাকুরের সাথে দক্ষিণেশ্বর আসা
১৮৭২ সালের ২৩ শে মার্চ ঠাকুরের সাথে (Sarada Devi) দক্ষিণেশ্বর আসার পর মায়ের সমস্ত ভয় ও সন্দেহ অপসারিত হয়। মা বুঝতে পারেন, ঠাকুর সম্পর্কে যে সব গুজবগুলি রটেছিল তা কেবলই সংসারী লোকের নির্বোধ ধারনামাত্র। (Sarada Devi)মা দেখলেন ঠাকুর তখন এক মহান আধ্যাত্মিক গুরু। দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে মা এসে নহবতের একতলার একটি ছোট ঘরে তিনি বাস করতে শুরু করলেন।
ষোড়শী পূজার আয়োজন
১৮৮৫ সাল অবধি মা (Sarada Devi) দক্ষিণেশ্বরে ছিলেন তবে মাঝে মধ্যে জয়রামবাটিতে গিয়েও স্বল্প সময়ের জন্য থাকতেন। এই সময় ঠাকুর মা কে দিব্য মাতৃ জ্ঞান করে ষোড়শী পূজার আয়োজন করেন। মা কালীর আসনে বসিয়ে পুস্প ও উপাচার দিয়ে পূজো করেন। ঠাকুর অন্য সকল নারীর মতো মা কেউ দেবীর অবতার বলে মনে করতেন। ঠাকুর এবং মায়ের বিবাহিত জীবন ছিল এক শুদ্ধ আধ্যাত্মিক সঙ্গত।
স্বামী সারদানন্দের মতে – তাদের বিবাহ হয়েছিল বিশ্বে আদর্শ দাম্পত্য সম্পর্কের এক নজির স্থাপনের উদ্দেশ্যই
মায়ের কথা থেকে জানা যায়, বিবাহিত জীবন ঠাকুর কখন মা কে তুই সম্বোধন করেননি। রূঢ় ব্যবহার দূরে থাক, কখন কোন রূঢ় বাক্য স্ত্রীর সামনে উচ্চারণ করেননি ঠাকুর। মা কেই মনে করা হয় ঠাকুরের প্রথম শিষ্য। ঠাকুর মা কে আধ্যত্মিক জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেন। মা কে দেওেয়া ঠাকুরের প্রধান নির্দেশ ছিল জপ এবং ধ্যান। মা প্রতিদিন রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠতেন এবং সর্বদা লজ্জাপটবৃতা ছিলেন বলে সূর্য দয়ের পূর্বে গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করতেন। বেলা একটার আগে যতক্ষণ বাইরের লোকজন আনাগোনা বন্ধ হতো। তিনি বাইরে বের হতেন না। মা এতটাই নিঃশব্দে এবং অলক্ষিত হয়ে বাস করতেন যে দক্ষিণেশ্বরে সেই সময় যিনি ম্যানেজার ছিলেন তিনি একবার বলেছিলেন যে মা এইখানে বাস করতেন। কিন্তু কোনদিন চোখে দেখেননি এমনই কথিত আছে। ঠাকুর দিব্যদৃষ্টিতে দেখেছিলেন যে ঠাকুরের এই আধ্যাত্মিক প্রচারকার্য চালিয়ে নিয়ে যাবেন মা। (Sarada Devi) সেই কারণে ঠাকুর মা কে মন্ত্র শিক্ষা দেন এবং মানুষকে দীক্ষিত করে আধ্যত্মিক পথে পরিচালিত করতে পারার শিক্ষা দান করেন।
ঠাকুর পরলোক গমন করলে মা বৈধব্য চিহ্ন হিসাবে হাতের বালা খুলে ফেলতে গেলে ঠাকুরের দর্শন পান
শেষ জীবনে ঠাকুর যখন ক্যানসারে আক্রান্ত তখন মা স্বামী সেবা এবং শিষ্যদের জন্য রন্ধনকার্য করতেন। ১৮৮৬ সালে আগস্ট মাসে ঠাকুর পরলোক গমন করলে মা বৈধব্য চিহ্ন হিসাবে হাতের বালা খুলে ফেলতে গেলে ঠাকুরের দর্শন পান।এই দর্শনে ঠাকুর মা কে বলেছিলেন তিনি কোথায় যাননি কেবলই এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গেছেন। মা যতবারই বিধবার বেশ ধারণ করতে গিয়েছিলেন ততবারই দিব্যদর্শনে নিরস্ত করেন। ঠাকুরের পরলোক গমনের পর ঠাকুর কে কেন্দ্র করে অঙ্কুরিত ধর্ম আন্দোলনে মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।