উত্তর হাওড়ার সালিখা হাউস।যা বাবুদের বাড়ি নামে পরিচিতি।প্রায় তিনশ বছর আগে এখানে আসেন জমিদার রাধা মোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।বাড়ি তৈরি করেন।বাবুদের বাড়ি বলে এলাকা বাবুডাঙ্গা বলে পরিচিত হয়।এরপর এখানে শুরু করেন দুর্গা পুজো।২৮২ তম বছরের প্রাচীন এই পুজো শুরু থেকেই ঐতিহ্য মেনে এখনো হয়ে আসছে বংশ পরম্পরায়।তবে এই পুজো সবচেয়ে জমজমাট হয় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়।এই বাড়িতেই জন্ম পুলক বাবুর।সময়টা ছিলো ১৯৩১ সাল।পড়াশোনার পাশাপাশি গানবাজনার প্রতি আগ্রহ ছিলো তার।চটজলদি লিখে ফেলতে পারতেন গান।সালিখা হাউসে বসে লিখেছেন বহু কালজয়ী গান।পরিবারের সদস্যরা জানান পুজোর আগে লেখা তার সব গান ছিলো হিট।পুজোর সময় এখানে আসতেন বহু বিশিষ্ট মানুষ।বসত গানের আসর।এই বাড়িতে আসতেন উত্তম কুমার।গান গাওয়া ছাড়াও ঘুড়ি ওড়াতেন ছাদ থেকে।এই বাড়িতে এসে গান গেয়েছেন অপরেশ লাহিড়ী তবলা বাজিয়েছেন বাপী লাহিড়ী।শেষ এলবাম “একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি” এখানে বসেই লেখা।পুলক বাবুর ভাইপো সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন “ও কেন এত সুন্দরী হলো” গান কিভাবে লেখা হয়েছিল।তিনি বলেন সেই সময় পুজোর দিনগুলো ছিলো একবারে অন্যরকম।
১৯৯৯ সালে ৭ ই সেপ্টেম্বর পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।এরপর থেকে পুজোর জৌলুশ কমেছে।তার ভাইপো ছাড়া অন্য সদস্যরা চলে গিয়েছেন।ভাইপো সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান সমান রীতি মেনে এখনো তিনি ও তার পরিবার পুজো চালিয়ে আসছেন।জন্মাষ্টমীতে প্রতিমায় মাটি লাগানোর কাজ শুরু হয় ঠাকুর দালানে।মহালয়ার পরের দিন থেকে বাড়ির ঠাকুর ঘরে পুজো শুরু হয়।ষষ্ঠীতে বরণ করে শুরু হয় পুজো।সপ্তমীতে কলা বউ স্নান হয় গঙ্গায় নিজেদের ব্যানার্জি ঘাটে।অষ্টমীতে কুমারী পুজো ও ধুনো পোড়ানো হয়।নবমীতে হয় ফল বলি।তবে আগে মোষ বলি হতো।পুজোর প্রতিদিন চন্ডী পূজো হয়।দশমীর দিন দেবীকে দেওয়া হয় বিশেষ বাসি ভোগ যা নবমীর দিন তৈরি করেন বাড়ির মহিলারা।দশমীতে ব্যানার্জি ঘাটে দেবীর নিরঞ্জন হয়।সুস্মিত বাবুর ছেলে সম্পদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানায় পুলক বন্দ্যোপাধ্যাকে তিনি দেখেননি তবে তার গান এখনো শুনতে ভালো লাগে।এখন বাড়িতে শুধু তাদের পরিবার থাকে।পুজো চালিয়ে আসছেন।আগামী দিনে ঐতিহ্য বজায় রেখে চালিয়ে যাবে।
DURGA PUJA Howrah: প্রয়াত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গা পুজো ,এবার ২৮২ তম বর্ষ
রিপোর্ট : শুভাশীষ দত্ত , এই যুগ, হাওড়া