Breaking News

Folk culture: বাংলার বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির নেপথ্যে

রিপোর্ট : সৌভিক চক্রবর্তী , এই যুগ, নিউজ ডেস্ক

Folk culture: বাংলার বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির নেপথ্যে কোনো জনগোষ্ঠীর বা গোষ্ঠী সমষ্টির (Folk culture) জীবনকেন্দ্রিক উৎসবগুলিই হয়ে ওঠে লোক উৎসব। (Folk culture) কালক্রমে গড়ে ওঠা বিভিন্ন লোক সম্প্রদায়ের সামাজিক আচার-আচরণ ও বিশ্বাস,‌ আনন্দ-উৎসব বাংলার মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। (Folk culture)এগুলিকে ঘিরেই তৈরী হয় তাদের লোকসংস্কৃতি। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শত শত বৎসর ধরে তাদের নিজস্ব ধ্যানধারণা ও জীবনযাপন প্রণালীকে ভিত্তি করে নানামুখী যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে তাই তাদের লোক সংস্কৃতি। এই লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো লোক উৎসব।লোকউৎসব গ্রামবাংলার জনগণের প্রিয় উৎসব। এর প্রচলন হয়েছে মূলত ভোজ-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। প্রাচীনকালে শিকারকৃত পশুর মাংস একত্রে বসে ভোজন করা এবং নৃত্যগীতের মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান পালিত হতো। পরবর্তীকালে কৃষি ও পশুপালন স্তরে এসে এ উৎসব নতুন মাত্রা লাভ করে এবং বিভিন্ন সময়ে যুগের দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের লোকউৎসবের সৃষ্টি হয়। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিসংশ্লিষ্ট অনেকগুলি উৎসব আছে, যার মধ্যে ইতু পূজা, সংক্রান্তি পূজা, তালনবমী, চড়ক পূজা, ভাদু, টুসু প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য, এবং যেগুলি প্রকৃতি নির্ভর কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের নিকট বিশেষ গুরুত্ববহ।

অষ্ট ধান অষ্ট দুর্বা কলস মাটি থুয়ে
শুন একমনে ইতুর কথা সবে প্রাণ ভরিয়ে
ইতু দেন বর
ধন ধান্য পুত্র পৌত্রে ভরে ওঠে ঘর

Folk culture: বাংলার বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির নেপথ্যে

ইতুপূজা

ইতুপূজা বাঙালির প্রধান ব্রতগুলির একটি। (Folk culture) অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার পালিত হয় এই ব্রত। ইতু হেমন্ত কালের পূজা যা শীতের আগমনী বার্তা বয়ে আনে।সূর্যের আরেক নাম মিত্র এবং রবি। মিত্র অপভ্রংশ হয়ে মিতু হয়ে ইতু।
ইতু মূলত সূর্যদেবের পুজো। তাই অঘ্রাণ মাসের প্রতি রবিবার এই ব্রত করা নিয়ম। রবি অর্থাৎ সূর্য। ফসলের মাসে সূর্যদেবকে তুষ্ট রাখতেই এই পুজো।
অঘ্রাণের নবান্নে প্রবল সূর্যালোকে ফসল উৎপাদন যাতে বেশি হয় তাই ইতু পুজো করে সূর্য দেবতাকে তুষ্ট করার রীতি। ঠিক একই কারণে পারস্যে একটি পূজার প্রচলন ছিল যার নাম মিথু।অগ্রহায়ণে সমৃদ্ধির কালে যিনি পূজিত হন তিনি নিছকই মিত্ররূপী সূর্য নন; বরং ধরণীর শস্যশ্যামলা রূপের প্রতীক মা লক্ষ্মী। ইতুপূজা আদিতে সূর্যপূজা হলেও এর রীতি এবং মন্ত্রগুলি সবই শস্যদায়িনী বসুন্ধরা মাতৃকার উপাসনার সাথে সংযুক্ত।

তালনবমী

বাংলার বিস্মৃতপ্রায় আরেকটি ব্রত কথা হলো ‘তালনবমী’। (Folk culture) দেবী দুর্গার আরেক নাম তালুজা , সেই থেকেই হয়তো অপভ্রংশ হয়ে তালনবমীর উৎপত্তি।ভাদ্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিকে কেন্দ্র করে, যাকে ‘তালনবমী’ বলা হয়। এ দিনের পূর্বে রাধাষ্টমী ও এর ১৫ দিন পূর্বে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়ে থাকে। তাই জন্মাষ্টমীর ও রাধাষ্টমীর পরে এই তালনবমী তিথি পালন করা হয়ে থাকে। তালনবমীর কথা আমরা পাই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে ; যেটা কেন্দ্র করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়, যার নাম “সহজ পাঠের গপ্পো।”

Folk culture: বাংলার বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির নেপথ্যেভাদু

ভাদু পশ্চিমবঙ্গের একটি কৃষিভিত্তিক উৎসব। বহুকাল আগে থেকেই এটি চলে আসছে এবং এখনও বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়। পুরো ভাদ্রমাস ব্যাপী পুরুলিয়া জেলার হিন্দু মেয়েরা ভাদুর পূজা করে। জনশ্রুতি আছে যে, কাশীপুররাজের অবিবাহিতা কন্যার ভাদ্র মাসে মৃত্যু হওয়ায় তাকে স্মরণ করার জন্য এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। একজন বর্ষীয়ান মহিলা ‘ভাদ্রেশ্বর্যৈ নমঃ’ বলে ভাদুমূর্তির দিকে ফুল ছুঁড়ে দেয়। এ সময় ভাদুর গান গাওয়া হয়। শেষ দিনে তারা সাশ্রুনয়নে ভাদুকে বিসর্জন দেয়।

এছাড়াও চড়ক,গাজন, নববর্ষ, হালখাতা ইত্যাদি আরও অনেক লোকউৎসবে সমৃদ্ধ আমাদের বাংলা। কিন্তু এই শতাব্দী প্রাচীন লোকধারার উৎসবগুলি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে জোর করে গুঁতো খাওয়া সাংস্কৃতিক কোপে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ‘কৃত্রিম রাম সংস্কৃতি’ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাঙালীর সংস্কৃতিতে। শতাব্দী প্রাচীন নিজেদের লোকউৎসব ছেড়ে বাঙালীকে মাতিয়ে রাখা হচ্ছে স্লোগানের উগ্রতায়।হারিয়ে যেতে বসেছে ইতুর ঘট, ভাদুর গান। দিকে দিকে গড়ে উঠছে ‘বজরঙবলীর’ মন্দির,যাকে আমরা হনুমান বলেই চিনি।

এই বাংলায় এমন কেউ  নেই যে ছোটোবেলায় কৃত্তিবাসের রামায়নের গল্প শোনেনি। আগে যাত্রাপালায় রামের নাটক অনুষ্ঠিত হতো, তাদের বনবাসের কাহিনী শোনানো এবং অভিনয় করে দেখানো হতো। কাজেই বাঙালীর সংস্কৃতিতে রাম পুরোপুরি বহিরাগত নন। কিন্তু বাংলার পরিবর্তনশীল সামাজিক – সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে আমরা বিভিন্ন পালাগান-যাত্রার বদলে দেখছি অস্ত্র উঁচিয়ে, সর্বোচ্চ প্রাবল্যমাত্রায় ‘ডিজে’ বাজিয়ে রাম এবং ‘বজরংবলী’ নিয়ে মিছিল। দেখছি এক সম্প্রদায়,অন্য সম্প্রদায়ের ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি। এটাই কি তবে বাংলার অপসংস্কৃতি!
রামচন্দ্রের প্রতি এই আকর্ষণ কী নিছকই নতুন ধর্মীয় আকর্ষণ? রামকে আমরা বরাবরই সুবোধ বালক এবং চরিত্রবান পুরুষ হিসেবে বিবেচনা করি। কিন্তু, তার ভক্তরা নিজেদের দাঙ্গার দাবীদার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে কেনো?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।