আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি, ছাত্র হিসাবে ততটা ভালো নয়। তার পরও ভালো মেধা আছে লোকে বলে । ক্লাসে ও নিয়মিত পড়া দিতে পারি। যদিও ফাস্ট বয় হতে পারি না। কারণ যে ফাস্ট বয় সে নিয়মিত পড়াশোনা করে। আমি খেলা পাগল মানুষ। খেলার জন্য ভিন্ন এলাকায় যেতাম। আমি বেশি খেলতাম দাড়িয়াবাধা খেলা। একদিন স্কুল থেকে এসে খেলতে গেলাম অন্য এলাকার সাথে। আমরা তিন জন, আমি সবার বড়, বাকিরা আমার চেয়ে ছোট এবং নিচের ক্লাসের। খেলতে খেলতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাড়ি কথা ভুলে গেছিলাম প্রায়। খেলা শেষে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তিনজনেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মাঝে একটি বিশাল হাওর, পরে একটি গ্রাম থেকে কাঁচা মাটির সড়ক দিয়ে ২০ মিনিট হাঁটলে আমাদের গ্রাম। আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসছে, আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করতেছে। কিভাবে বাড়িতে যাবো। এমন দিনে ভূতে মানুষ নিয়ে যায়। তাদের সাথে রেখে দেয়। এমনটা শুনতাম গ্রামে, ভুতের পছন্দ না হলে ঘাড় মটকে দেয়, অনেক সময় মাটিতে আস্তা পুতে রাখে। কিছু দিন আগে এমন ঘটনা শুনছি। এসব ভাবতে ভাবতে প্রায় চরের মাঝ খানে আসলাম। হঠাৎ দেখি একটি লোক সাদা পোশাক পড়ে রাস্তা পাশে দাড়িয়ে আছে। দেখে সবাই ভয় পেলাম। পা সামনে বাড়ানোর সাহস হচ্ছে না। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে সূরা পড়তে লাগলাম। কিন্তু লোকটি এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলে তিনজন থাকলে ভূত কাছে আসে না। ছোট্ট সময় দাদা ভূতের গল্প বলার সময় বলতো, ভূতেরা তিন জন পাঁচ জন এক সাথে থাকলে কাছে আসে না, বেজোড়া থাকতে হবে। আমি তাদের এই গল্প বলে সাহস দিতে লাগলাম। আমারা হাটা শুরু করলাম। হাটতে হাটতে লোকটি কাছে চলে এলাম।তবু একটু নড়াচড়া করছে না। আরও কাছে চলে এলাম তাও কোন শব্দ নেই। একদম নিকটে এসে দেখি এটি কাকতাড়ুয়া। যাইহোক ভয়টা একটু দূর করে হাটতে হাটতে চর টি পাড়ি দিলাম। গ্রামের রাস্তা দুই পাশে খুব অন্ধকার। এই রাস্তার ভূতের অনেক গল্প দাদা কাছে শুনেছি। আমাদের গ্রামের অনেক লোককে ভূতে তুলে নিয়ে কাছে। কাউকে আবার গাছের তলায় বসে রাখে সারারাত। কাউকে গাছের পাতায় বসে রাখে। এই রাস্তা সন্ধ্যা পরে মানুষের চলাচল বন্ধ প্রায়। কি আর করা বাড়িতে যেতে হবে। তিন জনে কাঁধে ধরে হাটতে শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি কাকে মেরে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে রেখেছে। আমার সাথে একটায় এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান। একটু সামনে দেখি লম্বা পাঞ্জাবি পড়া একলোক দাড়িয়ে আছে। এক হাত দিয়ে আমাদের কাছে ডাকছে…
কেমন একটি শোঁ শোঁ আওয়াজ এলো কানে। হঠাৎ পিছনে দেখি একটি গাছ নিচে পড়ে গেছে। ভয়ে ভিতর শুকিয়ে গেছে। মনে এক সাগর পানি খেতে পারবো। একটু সামনে চলতে পারতেছি না। দুইজন হয়তো সাহস করে চলে যেতে পারতাম কিন্তু একজন তো অজ্ঞান। এখানে দাড়িয়ে রইলাম। সাথের জন ভয়ে পেন্টে কাজ সেরে দিলো। ভয়ের সবচেয়ে বড় কারণ হলো, যাওয়ার এমন কিছুই রাস্তা দেখিনি। হঠাৎ দেখি মিটিমিটি একটি আলো আসছে আমাদের দিকে, লম্বা লাশের মতো সাদা পোশাক পড়া। এটি দেখে সাথের জন্য ও এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান। আমি দীর্ঘ সাহস নিয়ে রাস্তায় বসে আছি। ভাবছি আজকেই জীবনের অন্তিম সময়। হয়তো আর বেঁচে থাকবো না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এবার বেঁচে থাকলে আর জীবনে কখনো সন্ধ্যার পরে বাহিরে আসবো না। আস্তে আস্তে আলো টি আমার কাছে এগিয়ে আসছে। যতই কাছে আসছে আমার ভয় ততই বাড়ছে। একটু পর দুচোখ বন্ধ করে রইলাম। একটু চোখ খুলে দেখি এক হুজুর হারিকেন নিয়ে আমার সামনে দাড়ানো। হুজুরের আর বোঝার বাকি রইলো না। কিন্তু আমি ভাবতেছি এটা ভূত। মানুষের বেশে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাবে। হুজুর আবার আমাদের মহল্লার। আমাকে চিনে ভালো করে। হুজুর বসে আমাকে হাতে ধরে বললো, আমি তোমাদের হুজুর। কাঁপতে কাঁপতে কথা বলতে পারতেছিনা। হুজুর লোকজন ডেকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো। সারা রাত মা- বাবার সাথে ছিলাম, কিন্তু ঘুম আসেনি ভয়ে।
(মঙ্গলবার , জুলাই 18 2023)